বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ প্রতিষ্ঠার অব্যবহিত পরেই প্রাচীন পুথি সংগ্রহের প্রস্তাব ওঠে। প্রথম বর্ষের পঞ্চম অধিবেশনে (৮ আশ্বিন ১৩০১ বঙ্গাব্দ) এই প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। প্রসঙ্গত যতীন্দ্রনাথ রায়চৌধুরী তৎকালীন সভাপতি রমেশচন্দ্র দত্তকে লেখেন –
বাঙ্গালা ভাষায় যে সকল “সারগর্ভ প্রাচীন পুঁথি ও পাণ্ডুলিপি” আছে তাহা সংগ্রহ করিবার জন্য সংগ্রহ-কারক নিযুক্ত করুন।
রজনীকান্ত গুপ্ত লেখেন –
প্রাচীন কবিদিগের কবিত্বকীর্ত্তি এখন কেবল এই জীর্ণ পুঁথিতে আবদ্ধ আছে। … এই সকল পুঁথি সংগ্রহ করিলে ভাল হয়।
এই প্রস্তাব অনুযায়ী পুথি সংগ্রাহক (ঈশানচন্দ্র বসু) নিযুক্ত হন ও পুথিশালা স্থাপিত হয়।
সংগ্রহ –
মূলত পরিষৎ বান্ধব ব্যক্তিবর্গের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বিপুল পুথি-সংগ্রহ গড়ে উঠেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মুন্সী আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ, বসন্তরঞ্জন রায় , নগেন্দ্রনাথ বসু, অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণ, সজনীকান্ত দাস প্রমুখ ব্যক্তি পুথি দান করে পুথিশালার সম্পদ বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছেন। সংগৃহীত আছে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, গোপাল দাস চৌধুরী, পঞ্চানন চক্রবর্তী ও বিজিতকুমার দত্ত প্রমুখ ব্যক্তিবর্গের সংগ্রহের পুথি। বাংলা, সংস্কৃত, হিন্দি, অসমীয়া, ওড়িয়া, তিব্বতি, ফারসি ও সিংহলি পুথি এই পুথিশালাকে সমৃদ্ধ করেছে।
ভাষা ও সংগ্রহভিত্তিক পুথির সংখ্যা
বাংলা – ৩৮৩৩; সংস্কৃত – ৩৭২০; তিব্বতি ও সিংহলি – ২৩৭
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সংগ্রহ – ৩২৪; চিত্তরঞ্জন দাশ সংগ্রহ – ৪২৪; রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী সংগ্রহ – ২২৫; গোপাল দাস চৌধুরী সংগ্রহ – ৩৭১; পঞ্চানন চক্রবর্তী সংগ্রহ – ৭০; বিজিতকুমার দত্ত সংগ্রহ – ৩৫
বিশিষ্ট সংগ্রহ –
বড়ু চণ্ডীদাস রচিত শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের আবিষ্কৃত একমাত্র পুথি।
ক্ষেমানন্দ রচিত মনসামঙ্গলের পুথি।
বিষ্ণুপুররাজ গোপাল সিংহদেবের মহিষী ধ্বজামণি পট্টমহাদেবী লিখিত প্রেমবিলাস।
বিজয়রাম সেনের তীর্থমঙ্গল পুথি
বৃন্দাবন দাসের চৈতন্যভাগবত পুথি। এটি সংস্কৃত ভাষাতেও পাওয়া গেছে।
উপাদান বৈচিত্র্য –
বিভিন্ন উপাদানে লেখা পুথি পরিষৎ সংগ্রহে আছে। সেগুলির মধ্যে তালপাতা, তুলট কাগজ, সাঁচিপাত ও গাছের ছালে লেখা পুথিগুলি গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহ।
চিত্রিত পুথি –
বেশ কিছু চিত্রিত পুথি এই পুথিশালায় রয়েছে –
দ্বিজ কবিচন্দ্র রচিত লক্ষ্মণের শক্তিশেল পুথি।
ফারসি শাহনামা পুথি।
বিচিত্র পুথি –
সর্পমন্ত্র (৩০৬৬ নং)
হুঁকা ও তামাকের জন্ম কথা (২৩৮৫ নং)
জল পড়া (২৩৩৪ নং)
প্রলাপ সংগ্রহ (১৬৫২ নং)
উঞ্ছবৃত্তির পালা (১৮৩৫ নং)
হাট বন্দনা (১৮২৩ নং)
কাপাসের পালা (২৫৩৩ নং)
চৌর চক্রবর্তী (৮৮৬ নং)
যম সংবাদ(৮৯৯ নং)
আইনের পুথি (৩১০৫ নং)
অঙ্ক পুস্তক (২১৪১ নং)
শুভঙ্করী আর্যা (২৩৫২ নং)
লেখাপড়ার আর্যা (২৩৫১ নং)
কীর্ত্তন ঘোষা (২২৯৪ নং)
পুথিশালার পরিচালনার জন্য একটি উপসমিতি ও অধ্যক্ষ রয়েছেন। পুথিশালাধ্যক্ষ পদটি সৃষ্টি হয় ১৩৪১ সালে ছাত্রাধ্যক্ষ পদ রহিত হয়ে।