Bangiya Sahitya Parishat
( বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ )

Grade-I Heritage Building, Vde Notification No. 5584-UD/O/M/SB

বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ চিত্রশালা

বাংলার ঐতিহ্যবাহী বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ এমনই এক পীঠস্থান যেখানে একাধারে গ্রন্থশালা, পুথিশালার পাশাপাশি চিত্রশালারও অবস্থান। এই চিত্রশালার পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছিল ১৩১৩ বঙ্গাব্দের (ইং ১৯০৬-০৭) ৪ পৌষ থেকে ১৪ ফাল্গুন কলকাতার জাতীয় মহাসভার অধিবেশনে আয়োজিত ‘শিল্প ও কৃষি সংক্রান্ত মেলা’কে কেন্দ্র করে। সেখানে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ-এর উদ্যোগে যে সকল পুরাবস্তু (তাম্র ও প্রস্তর লিপির ছাপ, প্রাচীন ও ঐতিহাসিক স্থানের ও মন্দিরাদির আলোকচিত্র, প্রাচীন অঙ্কনচিত্র, সাহিত্যিকদের ব্যবহৃত দ্রব্যাদি ও হস্তলিপি, প্রথম মুদ্রিত বাংলা পুস্তক ও প্রাচীন পুথি) সংগৃহীত হয়েছিল, সেগুলিকে ওই অধিবেশনেই প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। প্রদর্শনীতে এই সকল দ্রব্য ব্যাখ্যাত হওয়ার ফলে ক্রমশ পরিষৎ মন্দিরে এই শ্রেণির দ্রব্য সংগৃহীত হতে থাকে। এভাবে পরিষৎ-এর চিত্রশালা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৩১৫ বঙ্গাব্দে। প্রথমাবস্থায় পরিষদের তদানীন্তন সহকারী সম্পাদক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টায় বর্তমান চিত্রশালার অধিকাংশ দ্রব্যই (প্রাচীন মুদ্রা ও মূর্তি) সংগ্রহীত হয় এবং ১৩১৯ বঙ্গাব্দে ( ইং ১৯১১) তাঁর উদ্যোগে “Descriptive Catalogue of Sculptures and Coins in the Museum of the Bangiya Sahitya Parishad” শিরোনামে একটি চিত্রসূচি প্রকাশিত হয়। চিত্রশালার কাজ ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিষদের এই বিভাগটির পরিচালনার জন্য ১৩১৯ বঙ্গাব্দে ‘চিত্রশালাধ্যক্ষ’ নামে একটি পদ সৃষ্টি হয় এবং প্রথম চিত্রশালাধ্যক্ষ নিযুক্ত হন নগেন্দ্রনাথ বসু (১৩১৯-২১)। বহু স্বনামধন্য ব্যক্তি তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহের মাধ্যমে চিত্রশালা সমৃদ্ধ করেন। এঁদের মধ্যে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, ব্যোমকেশ মুস্তাফী বিশেষ উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে এই চিত্রশালায় গ্যালারির সংখ্যা দুটি। ভবনের দ্বিতলে রয়েছে সাহিত্যিক স্মারক কক্ষ আর ত্রিতলে শতবার্ষিকী প্রদর্শকক্ষ। ১৪১৬ বঙ্গাব্দের ১৩ চৈত্র সাহিত্যিক স্মারক কক্ষের দ্বারোদ্ঘাটন করেছিলেন ভারত সরকারের তদানীন্তন অর্থমন্ত্রী এবং বর্তমানে ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রীপ্রণব মুখোপাধ্যায়।

চিত্রশালার বিভিন্ন সংগ্রহের মধ্যে রয়েছে –

সাহিত্যিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিগণের ব্যবহৃত দ্রব্যাদি – বঙ্কিমচন্দ্র, কবি হেমচন্দ্র, রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রমেশচন্দ্র দত্ত, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু-র ব্যবহৃত দ্রব্য — পোশাক, দোয়াত-কলম, চশমা, টেবিল, চেয়ার প্রভৃতি, রামমোহন রায়-এর ব্যবহৃত উষ্ণীষ। প্রদর্শিত হয়েছে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র সংগ্রহ। সংগৃহীত বস্তুর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল রবীন্দ্রনাথের কবিতা এবং তাঁর স্বাক্ষর খোদাই করা একটি তাম্রপত্র। স্বহস্তে লিখিত রবীন্দ্রনাথের বিয়ের চিঠি একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন।

পাণ্ডুলিপি – সংগ্রহীত হয়েছে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রমেশচন্দ্র দত্ত, সুরেন্দ্রনাথ মজুমদার, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী প্রমুখ বিশিষ্ট সাহিত্যিকদের পাণ্ডুলিপি।

মূর্তি ও তৈলচিত্র – চিত্রশালায় প্রদর্শিত হয়েছে রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগর, জগদীশচন্দ্র বসু, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের মূর্তি ও বিভিন্ন সাহিত্যিকের তৈল ও আলোকচিত্র।

প্রাচীন দলিল – সংগ্রহীত হয়েছে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে বঙ্কিমচন্দ্রের সম্পত্তি সংক্রান্ত দলিল এবং মনুষ্য বিক্রয়ের দলিল।

শতবার্ষিকী প্রদর্শকক্ষ – ২০০৮ সালে চিত্রশালার শতবর্ষ উপলক্ষ্যে রমেশ ভবনের ত্রিতলে সংযোজিত হয়েছে শতবার্ষিকী প্রদর্শকক্ষ। ২০০৯ সালের ২৪ জানুয়ারি এই প্রদর্শকক্ষের উদ্বোধন করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এই কক্ষে প্রদর্শিত হয়েছে মঞ্জুশ্রী, ব্রহ্মা, উমা-মহেশ্বর, বোধিসত্ত্ব,কল্যাণসুন্দরম মূর্তি, শান্তিনাথ, সূর্য, দুর্গা, পার্বতী, চামুণ্ডা প্রভৃতি। এছাড়াও প্রদর্শিত হয়েছে মন্দির গাত্রের লিপি, পোড়ামাটির দ্রব্যাদি, শাড়ি, দশাবতার তাস প্রভৃতি। বাংলার লোকায়ত শিল্পসংগ্রহের মধ্যে রয়েছে লৌকিক দেবদেবীর মূর্তি, পুতুল, খেলনা, মানতের জন্য হাতি, ঘোড়া, পটচিত্র, পোড়ামাটির তুলসীমঞ্চ, চালচিত্র, বৃষকাষ্ঠ।
বাঙালির দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় শিল্পসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে কাঁসা, পেতল, তামা প্রভৃতি দিয়ে তৈরি নানান উপকরণ – মালা, গ্লাস, বাটি, রেকাবি, লোকবাদ্যযন্ত্র, দাঁড়িপাল্লা, ঘরসাজানোর সামগ্রী, প্রসাধনী, রান্নাবান্না ও পুজোর উপকরণ।
এছাড়া প্রদর্শিত হয়েছে মুদ্রা, রাজা প্রতাপাদিত্যের সময় পাথরের গোলা, বিষ্ণুপুরের লৌহবর্ম, অস্ত্রশস্ত্রাদি, তাম্রপত্র দলিল। প্রাচীন চিত্রের মধ্যে প্রদর্শিত হয়েছে তিব্বত দেশীয় পতাকা (এর মধ্যে একখানিতে সহস্রবুদ্ধের মূর্তি অঙ্কিত আছে), জয়পুরের কৃষ্ণলীলা বিষয়ক চিত্র, পিঁড়ির উপর অঙ্কিত চিত্র প্রভৃতি।
চিত্রশালা পরিচালনার দায়িত্ব চিত্রশালা অধ্যক্ষের। তাঁকে সহায়তা করার জন্য আছে একটি উপসমিতি।

চিত্রশালা